নতুনদের জন্য ফ্রিল্যান্স গ্রাফিক্স ডিজাইনার হিসেবে সাফল্য পাওয়া অনেক
কষ্টকর। আমি যখন এই গ্রাফিক্স ডিজাইন শুরু করেছিলাম তখন সম্পুর্ন এলোমেলো
ভাবে কাজ করতাম। তখন আমাকে পরিপূর্ন দিকনির্দেশনা দেওয়ার মতো তেমন কেউ ছিল
না। এ কারনেই আমি অনেক কাজ একসাথে নিতাম যার ফলে আমাকে অনেক সমস্যার
সম্মুখিন হতে হতো। কিন্তু পরবর্তিতে আমি অন্যান্য ফ্রিল্যান্সারদের কাছ
থেকে অনেক গুরুত্বপূর্ন বিষয় শিখে সেই অনুযায়ী কাজ করা শুরু করি। এতে করে
অনেক তারাতারিই আমি সাফল্যের মুখ দেখতে পেয়েছিলাম। এ কারনে নতুন যারা
ফ্রিল্যান্সিং করতে আগ্রহী বা গ্রাফিক্স ডিজাইনার হতে চান তাদের জন্য এমন
কিছু টিপস দিলাম তা যদি আমি আমার ক্যারিয়ারের শুরুতে পেতাম তাহলে হয়তো আরও
দ্রুত সফলতার মুখ দেখতে পেতাম। চলুন টিপসগুলো দেখে নেওয়া যাক:
ক্লায়েন্টের সাথে সম্পর্ক:
ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন অংশই হচ্ছে ক্লায়েন্ট বা
বায়ার। এ কারনেই ক্লায়েন্টদের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে হবে।
- আপনার কাজের মানের তুলনায় কখনই ক্লায়েন্টদের কাছ থেকে কম মূল্য চাইবেন না।
- যদি ক্লায়েন্ট কোনো কারনে আপনার ওপর রেগে যায় তাহরে সাথে সাথে রিপ্লাই না দিয়ে সময় নিন। ক্লায়েন্টকে ঠান্ডা হওয়ার সময় দিন।
- ক্লায়েন্ট সবসময় সঠিক কথা না-ও বলতে পারে। সেক্ষত্রে ভদ্রভাবে না বলুন।
- কাজ শুরু করার আগে ক্লায়েন্টের কাছ থেকে কিছু টাকা আপফ্রন্ট রাখুন।
- সবসময় প্রফেশনাল থাকুন।
ডিজাইনিং এর সময়:
বিভিন্ন ডিজাইনারদের কাজ করার পদ্ধতি বিভিন্ন। কেউ সরাসরি কম্পিউটারে
বসেই ডিজাইনিং শুরু করেন, কেউ আবার প্রথমে কাগজে পেন্সিল দিয়ে ডিজাইন করে
নেন। আপনি যেভাবেই ডিজাইন করতে চান সেই পদ্ধতিতেই চলতে পারেন। এখানে আমার
কিছু টিপস হলো:
- কম্পিউটারে ডিজাইন করার আগে কাগজে স্কেচিং করে আপনার আইডিয়া ফুটিয়ে তুলুন।
- ক্লায়েন্টের টার্গেট অডিয়েন্স সম্পর্কে রিসার্চ করে তারপর ডিজাইনিং শুরু করুন।
- ডিজাইন করার সময় আপনি হিসেবে নয় ব্যাবহারকারী হিসেবে ডিজাইনটিকে পর্যবেক্ষন করুন।
- বিভিন্ন সোর্সের ডিজাইন দেখে নিজেকে অনুপ্রানিত করুন।
সময় ও কাজ ব্যাবস্থাপনা:
সময় ও কাজ ব্যাবস্থাপনা ফ্রিল্যান্সিং এর ক্ষেত্রে অনেক গুরুত্বূর্ন
বিষয়। মনে রাখবেন এক সময় আসবে যখন আপনি অনেক জায়গা থেকেই কাজের অফার পাবেন।
সেই মুহুর্তে আপনার সময় ও কাজের মধ্যে সমন্ময় সাধন করা অনেক জরুরী অন্যথায়
আপনার কাজ নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এক্ষত্রে কিছু টিপস হলো:
- আপনার কাজের জন্য একটি লিস্ট তৈরি করুন ও সেই অনুযায়ী কাজ করুন।
- গুরুত্বপূর্ন কাজগুলো আগে করার চেষ্টা করুন।
- কাজের সুবিধার জন্য কোনো প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট এপ্লিকেশন ব্যাবহার করতে পারেন।
- যখন অনেক ব্যাস্ত থাকবেন তখন আপনার কাজগুলো অন্য ফ্রিল্যান্সারদের দিয়ে করিয়ে নিতে পারেন
মার্কেটিং:
অনেক ফ্রিল্যান্স ডিজাইনারই মনে করেন যে তাদের মার্কেটিং এর কোনো
প্রয়োজন নেই। কিন্তু ভালো ক্লায়েন্ট পেতে হলে মার্কেটিং এর বিকল্প নেই।
নতুন ফ্রিল্যান্সারদের জন্য নিচে কিছু মার্কেটিং টিপস্ দেওয়া হলো:
- সোসাল মিডিয়াকে আপনার মার্কেটিং এর বড় হাতিয়ার হিসেবে ব্যাবহার করতে পারেন।
- আপনার কভার লেটার আরও আকর্ষনীয় করার চেষ্টা করুন।
- লোকাল মার্কেটে ও সারা বিশ্বে আপনার মার্কেটিং করুন।
- নিজের বিজনেস কার্ড তৈরি করুন এবং যখনই পারেন তা অন্যকে দেওয়ার চেষ্টা করুন।
- কোনো ইন্টারনেট ফোরামে আপনার কাজের এডভার্টাইজ করবেন না।
আরও কিছু টিপস:
আরও কিছু টিপস রয়েছে যা আপনার ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ারের জন্য অনেক
গুরুত্বপূর্ন। এই সকল টিপস যদি আমি না জানতাম তাহলে হয়তো আজ আমার এই
পর্যন্ত আসা সম্ভব হতো না। টিপসগুলো হলো:
- একটি আকর্ষনিয় পোর্টফোলিও তৈরি করুন।
- একটি ই-মেইল সফ্টওয়্যার ব্যাবহার করুন।
- আপনার ভুলগুলো থেকে শিক্ষা নিন ও সামনে এগিয়ে যান।
- যত কাজের অফার পাবেন সবগুলোই একসেপ্ট করবেন না। যাচাই বাছাই করে কাজ নিন।
- কাজের ফাঁকে ফাঁকে বিরতিরও প্রয়োজন রয়েছে তাই মাঝে মাঝে নিজেকে বিশ্রাম দিন। কোথাও ঘুরতে যেতে পারেন।
- নিয়মিত শারিরিক ব্যায়াম করুন।
আগেও বলেছি আমি আমার ক্যারিয়ারের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন নির্দেশনা
পেয়েছিলাম অন্যান্য সফল ফ্রিল্যান্সারদের কাছ থেকে এবং কিছু কিছু পেয়েছিলাম
নিজের অভিজ্ঞতার মাধ্যমে। নতুনদের যেহেতু কোনো অভিজ্ঞতা থাকে না তাই আমার
মতে সফলতার জন্য তাদের উচিৎ প্রফেশনাল ডিজাইনারদের থেকে প্রশিক্ষন গ্রহন
করা। নতুন ফ্রিল্যান্স ডিজাইনারদের জন্য এসআইআইটিতে শুরু হয়েছে প্রফেশনাল গ্রাফিক্স ডিজাইনিং কোর্স। তাই দেরি না করে চলে আসতে পারেন আমাদের অফিসে।
0 comments:
Post a Comment